মধু সেবনের আশ্চর্য গুনাগুন ও উপকারিতা :
আমাদের দেহের জন্য মধু অত্যন্ত উপকারী এবং নিয়মিত মধু সেবন করলে অসংখ্য রোগবালায় হতে পরিত্রান পাওয়া যাবে। এটি বৈজ্ঞানিকভাবেই প্রমানিত। হাজার বছর পূর্বেও মধু ছিল সমান জনপ্রিয়। ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অনেক সভ্যতায় মধু ‘ঔষধ’ হিসেবেও ব্যবহৃত হত। মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান থাকে। এতে চর্বি এবং প্রোটিন নেই। একশ গ্রাম মধুতে ২৮৮ পরিমাণ ক্যালরি থাকে। গুণে ভরা মধুতে রয়েছে গুকোজ ও ফ্রুকটোজ যা শরীরে শক্তি যোগায়। মধুর অন্যান্য উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এমনকি প্রতিটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থেও মধু সেবনের উপকারিতা এবং কার্যকারিতার কথা উল্লেখ রয়েছে। যেমন পবিত্র আল কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “আপনার পালনকর্তা মৌমাছিকে আদেশ দিলেনঃ পর্বতে, গাছে ও উঁচু চালে বাড়ি তৈরী কর, এরপর সর্ব প্রকার ফুল থেকে খাও এবং আপন পালনকর্তার উন্মুক্ত পথে চলো। তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে মানুষ প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে, মিষ্টি হিসেবে, চিকিৎসা ও সৌন্দর্য চর্চা সহ নানাভাবে মধুর ব্যবহার করে আসছে। সুতরাং শরীরের সুস্থতায় মধুর উপকারিতা অনেক। এটা স্পষ্ট যে মধু আমাদের জন্য কতখানি উপকারি।
মধুর ভৌত বৈশিষ্ট্য:
মধু হল একটি বিশুদ্ধ পদার্থ যাতে পানি বা অন্য কোন মিষ্টিকারক পদার্থ মিশ্রিত করা হয় নাই।” মধু চিনির চাইতে অনেক গুণ মিষ্টি। তরল মধু নষ্ট হয় না, কারন এতে চিনির উচ্চ ঘনত্বের কারণে প্লাজমোলাইসিস প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া মারা যায়। প্রাকৃতিক বায়ু বাহিত ইস্ট মধুতে সক্রিয় হতে পারে না, কারন মধুতে পানির পরিমাণ খুব অল্প। প্রাকৃতিক, অপ্রক্রিয়াজাত মধুতে মাত্র ১৪% থেকে ১৮% আর্দ্রতা থাকে। আর্দ্রতার মাত্রা ১৮% এর নিচে যতক্ষণ থাকে, ততক্ষণ মধুতে কোন জীবাণু বংশ বৃদ্ধি করতে পারে না। পাস্তুরাইয্ড মধুতে মধুর প্রাকৃতিক ঔষধি গুণাবলী হ্রাস পায়।
সুন্দরবনের প্রাকৃতিক RAW মধুর ৭ টি বৈশিষ্ট্যঃ
দেখতে সাধারণত Light Amber রঙের হয় (তবে সময় ও ফুল ভেদে কিছুটা Light বা Dark হতে পারে)।
খেতে খুবই সুস্বাদু, হালকা টকটক মিষ্টি লাগে।
কিছু মানুষের কাছে- সুন্দরবনের মধু অনেকটা আখের রসের মতো লাগে।
মধুর ঘনত্ব সবসময় পাতলা হবে (আমরা কখনই সুন্দরবনে ঘন মধু পাইনি)।
সুন্দরবনের মধুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- একটু ঝাঁকি লাগলেই প্রচুর পরিমাণে ফেনা হয়ে যাবে। তবে শীতকালে ফেনা হওয়ার প্রবণতা কম দেখা যায়।
সুন্দরবনের খাটি মধু আমরা কখনই জমতে দেখনি। হোক সেটা ফ্রিজের ভেতরে বা বাইরে।
এই মধুর আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- হাতে চাক কাটা পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা মধুর উপরে হলুদ রঙের পোলেন জমা হয়। এটাকে অনেকে গাদ জমা বলে থাকেন।
আসুন জেনে নিই খাঁটি মধু চেনার উপায়-
পরিষ্কার কাঁচের গ্লাসে নরমাল পানি দিন এবং ১ টেবিল চামচ মধু স্বাভাবিক ভাবে ঢালুন, খাঁটি মধু গ্লাসের তলায় পিন্ড আকারে জমে থাকবে।আবার খাঁটি মধু ড্রপ আকারে গ্লাসের পানিতে ছাড়লে পানিতে না মিশে গ্লাসের তলায় জমবে এবং ড্রপ আকারে তলায় যাওয়া দেখা যাবে।
১ বা ১/২ চা চামচ পরিমান মধু হাতের তালুতে নিয়ে তাতে সামান্য পরিমান চুন মিশাতে থাকুন খাঁটি মধু হলে হাতের তালু গরম অনুভব হবে, মধুর ঘনত্ব কমবে অর্থাৎ হালকা পাতলা আকার ধারণ করবে।ঘনত্ব অবশ্যই আরও বেশী হবে না।
উল্লেখ্য আরও অনেক ধরণের খাঁটি মধুর পরীক্ষা রয়েছে, তবে উপরোল্লেখিত পরীক্ষাগুলো বিশেষ ভাবে প্রমাণিত।
আসুন জেনে নিই মধুর উপকারিতা :
১। রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায়
২। হজমে সহায়তা
৩। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
৪। রক্তশূন্যতায়
৫। ফুসফুসের রোগ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে
৬। গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তিতে
৭। যৌন দুর্বলতায়
৮। প্রশান্তিদায়ক পানীয়
৯। মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায়
১০। পাকস্থলীর সুস্থতায়
১১। দেহে তাপ উৎপাদনে
১২। পানিশূন্যতায়
১৩। দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে
১৪। রূপচর্চায়
১৫। ওজন কমাতে
১৬। হজমে সহায়তা
১৭। গলার স্বর
১৮। তারুণ্য বজায় রাখতে
১৯। হাড় ও দাঁত গঠনে
২০। রক্তশূন্যতা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে
২১। আমাশয় এবং পেটের পীড়া নিরাময়ে
২২। হাঁপানি রোধে
২৩। উচ্চ রক্তচাপ কমায়
২৪। রক্ত পরিষ্কারক
২৫। রক্ত উৎপাদনে সহায়তা
২৬। হৃদরোগে
২৭। শক্তি প্রদায়ী
২৮। জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই
২৯। ব্যথা নিরাময়ে
৩০। অনিদ্রায়
৩১। মধু খেলে বুদ্ধি বাড়ে
৩২। ঠান্ডা দূর করে মধু
৩৩। শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশে
৩৫। ক্ষত সারাতে মধু
মধুর অপকারিতা :
মধুর তেমন কিছু অপকারিতা নেই। কিন্তু মধু বেশি খাওয়া যায় না, অতিরিক্ত মধু খেলে গাঁয়ের মধ্যে অস্থিরতা বা জ্বলা ভাব হতে পারে। সুতরাং মধু পরিমিত খাওয়া উচিত।
মধু সংরক্ষণের নিয়মাবলীঃ
একটি শুকনো জায়গায় এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য একটি এয়ার টাইট জারে সংরক্ষণ করুন।
Need an account? Register Now
Minhaj
31-08-2022সুন্দরবনের মধু অনেক খেয়েছি এই মধু সবচেয়ে বেশী ভালো লেগেছে ।