জনৈক নওজোয়ান বাগড়া দেয়ায় বাড়িয়ে দেয়া হাত গুটিয়ে নিলো আজরাইল। টাংগা চেপে না পড়ে রাস্তা পেচে পড়লো গোড়াকাটা তালগাছ। সাক্ষাৎ মওত থেকে মুক্তি পেলো তিন তিনজন ইনসান।
সুবহান আল্লাহ, সুবহান আল্লাহ!!
রাস্তা বেয়ে আসছিলো এই অশ্বারোহী নওজোয়ান। আসতে আসতে সে লক্ষ্য করলো, বিশাল এক তালগাছের গোড়া কাটা হচ্ছে আর শেষ হয়েছে গোড়া কাটা। পতনোন্মখ তালগাছটি ঝুঁকে পড়েছে রাস্তা-লম্বা। চমকে উঠে নওজোয়ান রাস্তা থেকে নেমে রাস্তার পাশ দিয়ে ধীরে ধীরে অশ্ব চালাতে লাগলো। এরপরই সে লক্ষ্য করলো তালগাছটি পড়ে যাচ্ছে রাস্তা বরাবর। একই সঙ্গে সে আঁতকে উঠে লক্ষ্য করলো, দ্রুত ছুটে এলো একটা টাংগা, আর টাংগাটা চলে এলো পতনোন্মখ তালগাছটার একদম পেটের তলে।
‘ইয়া আল্লাহ!’ বলে ক্ষীণ একটা আওয়াজ দিলো নওজোয়ান। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সে সঙ্গে সঙ্গে লাগাম টানলো অশ্বের। পোষমানা অশ্বটি তার লাগামের টান পেয়েই লাফিয়ে উঠলো রাস্তার উপর আর চলে এলো টাংগার কাছে। নওজোয়ানটি সঙ্গে সঙ্গে এক হাতে টাংগার অশ্বের লাগাম ধরে অন্য হাতে ফের টান দিলো নিজের অশ্বের লাগামে। মড়্ মড় করে উঠলো তালগাছের কাটা গোড়া। পুনরায় টান পেয়ে নওজোয়ানটির অশ্ব এক লাফে নেমে এলো রাস্তা থেকে। অশ্বের সেই টানে টাংগার অশ্ব আর টাংগা চলে এলো রাস্তার কিনারে। সঙ্গে সঙ্গে চারপাশের ভূমি প্রকম্পিত করে বিকট শব্দে রাস্তা বরাবর শাটপাট পড়ে গেল তালগাছটা। এক সেকেন্ড সময়ের ব্যবধানে তালগাছটা টাংগার উপর না পড়ে টাংগার একদম কোল ঘেঁষে পড়লো। পড়ার সময় তালগাছের বাতাসে উড়ে উঠলো টাংগার আরোহীদের পোশাক পরিচ্ছদ এবং নিশ্চিত মওত থেকে বেঁচে গেল ভাগ্যবান আরোহীরা।
তালগাছ কাটতে আসা লোকজনসহ রাস্তার ও রাস্তার চারপাশের লোকজন দম বন্ধ করে এদিকে তাকিয়ে ছিল। টাংগার আরোহীরা বেঁচে গেল দেখে তারা বুক খালি করে দম ছেড়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ!’ আওয়াজ দিয়ে উঠলো। সেই সাথে সকলে সমস্বরে শুরু করলো অশ্বারোহী নওজোয়ানটির মহানুভবতা আর তার সাহসের তারিফ। সবাই ছুটে এলো নওজোয়ানটির কাছে। তা দেখে অশ্বারোহী নওজোয়ানটিও নেমে এলো অশ্ব থেকে।
টাংগার আরোহীরা প্রথমে কিছুই বুঝে উঠতে পারেননি। তাল গাছটি যখন তাদের টাংগার একদম কোলঘেঁষে পড়লো, তখন তারা বুঝতে পারলেন, তাদের জান কবজ করতে এসে এইমাত্র ফিরে গেলেন আজরাইল। সঙ্গে সঙ্গে তারা এটাও উপলব্ধি করলেন যে, বাঁচা মরার মালিক যদিও আল্লাহ, তাদের এই বেঁচে যাওয়ার উপলক্ষ ঐ অশ্বারোহী নওজোয়ানটি। রাস্তায় উঠে সে তাদের অশ্বের লাগাম ধরে জোরে টান দিয়েছিল বলেই তাদের অশ্ব আর টাংগা সরে এসেছিল তাল গাছটির তলে পড়া থেকে।
এটা উপলব্ধি করেই তারা দ্রুত নেমে এলেন টাংগা থেকে এবং ঘিরে ধরলেন নওজোয়ানটিকে। টাংগার আরোহী তিন জন। একজন সহিস আর বাকী দু’জনের একজন বছর সত্তর বয়সের এক রাজপুরুষ আর অপরজন ঐ বংশের অষ্টাদশী মেয়ে। অপরূপা সুন্দরী এক যুবতী। ঐ বয়স্ক প্রৌঢ়টি ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলেন নওজোয়ানটিকে এবং তার গা-মাথা নেড়ে তাকে দোয়া আশীর্বাদ করতে লাগলেন। নওজোয়ানটি ছিল বছর চব্বিশেক বয়সের এক দর্শনধারী অশ্বারোহী।
দোয়া আশীর্বাদ ও প্রশংসা অন্তে অন্যান্য লোকেরা আস্তে আস্তে সবাই চলে গেলেন নিজ নিজ পথে ও কাজে। ভীড় কমে গেলে প্রৌঢ় রাজপুরুষটি নওজোয়ানকে জিজ্ঞাসা করলেন- আপনার নাম কি জনাব? আপনার এ ঋণ শোধ করার সাধ্য আমাদের নেই। তবু নাম পরিচয় জানা থাকলে হয়তো আপনার কোন কাজেও লাগতে পারি আমরা।
নওজোয়ানটি বিনয়ের সঙ্গে বললো- আপনি একজন সম্ভ্রান্ত প্রবীণ ব্যক্তি। আমি একজন প্রায় ছেলে মানুষ। আপনার নাতীর বয়সী। ‘আপনি আপনি’ করে আমাকে শরমিন্দা করবেন না জনাব। দয়া করে আপনি আমাকে ‘তুমি’ করে বলুন।
এ কথায় প্রৌঢ় ভদ্রলোকটি খুবই খুশি হলেন। বললেন- সাব্বাশ! তা, ভাই সাহেবের নামটা? মানে আমার এই নাতীর নামটা?
নওজোয়ানটি বললো- আমার নাম সেলিম মালিক, সেলিম মালিক খলজি। সংক্ষেপে সেলিম খলজি।
: মারহাবা, মারহাবা! তুমিও খলজি?